গল্প : অভিমানী পিচ্চি বউ


লেখক : মোঃ মামুন হোসেন 


ছোট গল্প


আমি : বউ


বউ : (নিশ্চুপ )


আমি : ও বউ একটু জড়িয়ে ধরি যেই হাতটা ওর গায়ে দিব


বউ : ঐ আমাকে ছুবা না


আমি : কি হয়েছে বলবে তো


বউ: আমার কিছু হয়নি 


আমি : তাহলে আসো ভাত খাবো


বউ : টেবিলে রেডি করা আছে খেয়ে নাও


আমি : তুমি খাবে না


বউ : না


আচ্ছা আপনাদের পরিচয় টা দিয়ে ফেলি আমি হলাম সুহেল। বাবা মায়ের একমাত্র ছেলে আর ছোট বোন একটা আছে।আমি ছোট একটা জব করি আর যার সাথে কথা বললাম আপনারা বুজতেই পারছেন সে হলো আমার বউ। আমাদের বিয়ের প্রায় ছয় মাস হলো। আমার বউটা খুব অভিমানী সামান্য কিছু হলে অভিমান করে বসবে। অবশ্যই আমাকে খুব ভালোবাসে


এখন কি যে করি ভাবতাছি কি এমন ভুল করলাম যে বউ আমার সাথে অভিমান করলো ? না তেমন ভুল করি নাই তবে মনে পড়েছে অফিসে যাওয়ার সময় বলেছিল আইসক্রিম আর ফুচকা আনতে কিন্তু ভুলে গেলাম। এইজন্যই নাকি আচ্ছা এখন গিয়ে নিয়ে এসি দেখি বউটার রাগ ভাঙ্গে নি। যেই ভাবা সেই কাজ তার পর আইসক্রিম আর ফুচকা নিয়ে আসলাম এসে দেখি বউ গেইটের সামনে দাড়িয়ে আছে 


বউ : কই গেছিলেন


আমি : তোমার জন্য ফোচকা আর আইসক্রিম আনতে আসলে অফিস থেকে আসার সময় ভুলে গেছি 


কিছুই বলল না সূজা রুমে চলে গেল কি করব এই অভিমানী বউটা নিয়ে। তার পর রুমে গেলাম গিয়ে টেবিলে ফুচকা আর আইসক্রিম রাখলাম দেখি খাটের একদম সাইটে অন্য দিকে মুখ ফিরিয়ে শুয়ে আছে। তাই আমি গিয়ে কিছু টা জড়িয়ে ধরতেই এমন উসকি মারলো আমি খাটের নিচে পড়ে গেলাম।


উঠছি না একটু অভিনয় করছি। দেখি বউ খাট থেকে নেমে আমার কাছে আসলো ও আমার কাছে আসতেই হেসে দিলাম। আসলে হাসি কনট্রল করতে পারি নাই অভিনয় জানি না দেখি বউটা আবার খাটে গিয়ে কাদছে। দুর এখন নিজের উপর রাগ হইতাছে।


 তার পর গেলাম তার কাছে


আমি : ঐ কি হয়েছে বলবে তো আর ভালো লাগছে না


বউ : আমাকে তো এখন আর ভালো লাগে না বললেই তো পারতে 


আমি : আচ্ছা জান কি হয়েছে প্লিজ একটু খুলে বল

ওর হাত ধরে 


বউ : কত বার বলবো আমাকে ছোবে না 


আমি : আচ্ছা আর ছোবো না আমার দিকে থাকিয়ে কথা বলো


তার পর আমার দিকে থাকালো দেখি চোখে পানি 


আমি : আচ্ছা চোখের পানিটা মুছে দেই 


বউ: না আমি পারবো 


আমি : ওকে আচ্ছা কি হয়েছে বল 


বউ : আমার কিছু হয় নি 


আমি : তাহলে 


বউ : আচ্ছা আমি তোমার জীবন থেকে চলে গেলে তুমি খুব খুশি হবে তাই না 


আমি : এসব কি বলছো আমি তো তোমাকে ছাড়া এক মূহুর্ত থাকতে পারবো না 


বউ : আবার মিথ্যা কথা 


আমি : আমি এই তোমার মাথায় হাত দিয়া কইতাছি


বউ : বললাম না আমাকে ছোবা না কত বার বলবো 

তুমি তোমার ঐ মেয়েটার কাছে যাও আমার কাছে কি (খুব রেগে )


আমি : কোন মেয়েটা তুমি তো আমার প্রানের বউ তাই না। অন্য মেয়ের কাছে যাব কেন 


বউ : ন‍্যাকামো হচ্ছে 


আমি : ন‍্যাকামো মানে আমি তো কিছু বুঝতে পারছি না 


বউ : কি বুঝবে তুমি?? চরিত্রহীন লম্পট ঘরে বউ রেখে অন্য মেয়ের সাথে প্রেম করো 


ওর কথা গুলো সব বুকে আঘাত করলো তার পর ও শান্ত থাকলাম 


আমি : আচ্ছা আমি যে প্রেম করি তোমাকে কে বলেছে 


বউ : কে বলবে আবার ফারিয়া বলেছে 


আমার আর বুঝতে বাকি রইলো না ফারিয়া আমার বোন খুব দুষ্ট আজ সকালে 


ফারিয়া : ভাইয়া আমার টাকা দাও 


আমি : কিসের টাকা ( ওর কাছ থেকে এক দিন পাচশ টাকা নিয়ে ছিলাম )


ফারিয়া : কিসের টাকা মানে পরে কিন্তু এর জন্য পস্তাতে হবে


আমি : যা পারিস করে নিস 


ফারিয়া : ওকে যাও তবে নাম মনে রাখিও


আমি : ওকে


আমি : আচ্ছা অ বলেছে তুমি বিশ্বাস করেছো আমাকে বিশ্বাস কর না 


বউ : আগে করতাম এখন করি না 


আমি : বিশ্বাস কর ফারিয়া সব মিথ্যা বলেছে


বউ : আমি বিশ্বাস করবো না কাল আমি আমার বাপের বাড়ি চলে যাব 


আমি : আচ্ছা ভালো কিন্তু তোমার প্রমাণ কি আমি যে অন্য মেয়েদের সাথে প্রেম করি 


বউ : এই নাও প্রমাণ ( মোবাইল টা দিয়ে )


আমি : ফারিয়া এই পিক দেখিয়ে আম্মুর কাছে অনেক বকা খাওয়াইছে আর তোমাকে বিয়া করতে হইছে 


বউ : মানে 


আমি : মানে ফারিয়ার সাথে একদিন ঝগড়া হয়েছিল তখন আম্মুকে এই পিক দেখায় তার পর আম্মু জোর করে তোমার সাথে বিয়ে দিছে। 


বউ : 😭😭 তুমি বিয়ের আগে প্রেম করছো এখন ঘরে বউ রেখেও প্রেম করছো আমি তোমার কি এমন ক্ষতি করলাম যে আমার জীবন টা কেন নষ্ট করলা 😭😭 আমি এখনই চলে যাব


আমি : আচ্ছা আমার কথাটা শুন 


বউ : তোমার আর কি কথা শুনবো


আমি : আচ্ছা আমি নিয়ে দিয়ে আসবো আমার কথা টা শুন 


বউ : কি বলবে বল 


আমি : আচ্ছা আমাকে কি একটু বিশ্বাস কর না


বউ : আচ্ছা করলাম এই পিক টা কি মিথ্যা 


আমি : আমি বলেছি কি পিক টা মিথ্যা আসলে উনি আমার অফিসের মালিক 


বউ : তো আমি কি করবো 


আমি : মেডামের স্বামী আছে আর উনার দুই টা সন্তান ও আছে এক দিন মেডামের গাড়ি নষ্ট হয়ে ছিল তাই ওকে লিফট দিয়েছিলাম।আর মেডাম আমাকে নিজের ভাই মনে করে। কখন যে ফারিয়া পিক তুলেছে আমি বুঝতে পারি নাই। 


বউ : আচ্ছা তার প্রমাণ কি


আমি : আচ্ছা ওয়েট 


তার পর ফেসবুকে ঢুকে মেডামের প্রফাইলে ঢুকলাম ঢুকে ওর হাতে মোবাইল দিলাম এখানে মেডামের পরিবারের অনেক ছবি আছে


আমি : ভালো করে দেখো


বউ : তার মানে ফারিয়া সব মিথ্যা বলেছে


আমি : না সত্য বলেছে 


এই বলে আমি গিয়ে শুয়ে পড়লাম। একটু পর বউ আমার কাছে আসল এসে 


বউ : সরি 


আমি : এই চরিত্রহীন লম্পট ছেলে কে সরি বলছেন কেন 


বউ : প্লিজ আমাকে মাফ করে দাও আসলে মাথা ঠিক ছিল না 


আমি : ওকে মাফ করে দিলাম 


বউ : আমার দিকে থাকাও না রাগ করছো


আমি : না আমি রাগ করি না 


বউ : আচ্ছা আমার যায়গায় তুমি হলে কি করতে 


আমি : মানে 


বউ : কোন ছেলের সাথে আমার পিক দেখলে তুমি কি করতে 


আমি : আমার উপর তোমার কোন বিশ্বাস নাই


বউ : আছে তো আমি প্রথমে বিশ্বাস করি নাই ও এমন করে বলল আর আমাকে পিক দেখালো। পিক দেখে আমার মাথা ঠিক ছিল না 


আমি : আচ্ছা বুঝলাম কাদছিস কেন 


কিছু না বলে এসে জড়িয়ে দরলো আমি ও থাকে বুকে জড়িয়ে নিলাম নিয়ে কপালে একটা চুমু দিলাম কিছু সময় এভাবে থাকার পর 


আমি : সারা দিন ধরে কিছু খাওনি 


বউ : হুম খাইছি 


আমি : আবার মিথ্যা কথা কি খাইছো


বউ : পানি এক গ্লাস খাইছি


আমি : রাগ করছো আমার সাথে আর ভাত খেলে না কেন 


বউ : এমনি খিদা ছিল না


আমি :আর যেন এমন না হয় চল ভাত খাবে 


বউ : এভাবে থাকি কিছু সময় 


আমি : চল এমনিতে তোমার পেট ভাতের জন্য হা হা করছে


বউ : একটা শর্তে যাব 


আমি : আচ্ছা শর্ত কি


বউ : তোমার হাত দিয়ে আমাকে খাওয়াই দেবে


আমি : ওকে মেডাম আমাকে ছেড়ে চলুন 


তার পর ভাত খেলাম আমি বউকে খাইয়ে দিলাম বউ ও আমাকে খাইয়ে দিল। তার পর এলাম ঘুমাতে 


বউ : একটা কথা বলি কাল শুক্রবার তোমার অফিস বন্ধ


আমি : জি মহারানি বলেন 


বউ : সময় সাড়ে তিন টা বাজের 


আমি : হুম 


বউ : এখন ঘুমালে ফজরের নামাজ পড়তে পারবো না আর এখন কিছু সময় দুজন গল্প করে তাহাজ্জুদের নামাজ পড়ে আল্লাহ্ এর কাছে দোয়া করবো আমাদের দাম্পত্য জীবন টা যেন সুখের হয়। পরে ফজরের আযান দিলে ফজরের নামাজ পড়ে ঘুমিয়ে পড়বো 


আমি : সত্যি তোমাকে জীবন সঙ্গী হিসেবে পেয়ে আমি নিজেকে ধন‍্য মনে করি। প্রতিটা ছেলে যেন তোমার মতো একটা জীবন সঙ্গী পায়


তারপর দুজন নামাজ পড়ে এসে আমার বুকে মাথা রাখলো। তার পর বউকে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে পড়লাম।


সমাপ্ত



বি দ্র: ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।আর গল্পটি কেমন হয়েছে অবশ্যই জানাবেন।

Post a Comment

Previous Post Next Post